ত্রানের জন্য হাকালুকির লক্ষাধিক মানুষের হাহাকার
মৌলভীবাজার সংবাদদাতাঃ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের লক্ষাধিক বানভাসী মানুষ চলতি বন্যায় চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ২য় দফা এ বন্যায় হাওর পারের ভুকশিমইল ইউনিয়নের শতভাগ মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠায় চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন এ ইউনিয়নের ৪৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে পৌরসভা এলাকার বিহালা,সোনাপুর,বিছরাকান্দি এলাকায় মানুষের ঘরে হাটুপানি। এছাড়াও বরমচাল,ভাটেরা,কাদিপুর ও জয়চন্ডি ইউনিয়নসহ মোট লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার সারা দিন ও রাতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাওরের পানি মোটেই কমেনি। ফলে চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ৬/৭ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারী সাহায্য না পেয়ে অনাহারে দিনানিপাত করছেন হাওরপারের দরিদ্র মানুষ জন। আর সাহায্য প্রাথীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাওরপারের শতভাগ বন্যায় আক্রান্ত ভুকশিমইল ইউনিয়নে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বন্যার পানির নীচে ইউনিয়নের সকল রাস্তাঘাট,স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা। ঈদের এ মৌসুমে এলাকার মানুষজন শহরের আসতে নিধারুন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নৌকাযোগে গাদাগাদি করে নারী পুরুষরা শহরে আসতে দেখা যায়। অস্থায়ীভাবে কুলাউড়ার পৌর এলাকার বিহালা গ্রামে এবং ভুকশিমইল গ্রামে নৌকার স্ট্যান্ড স্থাপিত হয়েছে। মানুষজন নৌকাযোগে চলাফেরা করছেন। কিন্তু নৌকা স্বল্পতার কারনে নদী পথেও যোগাযোগ সময় সাপেক্ষ্য এবং অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বানভাসী মানুষের। নৌকাযোগে বন্যায় আক্রান্ত ভুকশিমইল, বাদে ভুকশিমইল, চিলারকান্দি, জাবদা, সাদিপুর, মুক্তাজিপুর, কাড়েরাসহ আরও কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মানুষের বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। কারও বাড়িতে কোমর পানি, আবার কারও বাড়িতে হাটু পানি। ঘর থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। চর্তুদিকে পানি আর পানি। যাদের নৌকা আছে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন। আর যাদের নৌকা নেই তারা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে।
ভকুশিমইল গ্রামের ফয়জুল মিয়া ওরেফে ফয়জুল পীর জানান, তার টিন শেডের ঘরের কোমর পানি। তাই এ ঘরে বসবাস করতে পারায় ঘরের সকল মালামাল ফেলে উঠেছেন আতœীয়ের বাড়ীতে। কিন্তু আপসোসের সঙ্গে তিনি বলেন,সরকারীভাবে এখনো সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। একই গ্রামের সোহাগ, তাহির আলী, জাবেদ, জবলু ও সাজু জানান, তাদের সকলের বাড়িতে হাটু পানি। কারও বাড়িতে কোমর পানি। এ গ্রামে আরও অর্ধশতাধিক মানুষের বাড়িতে পানি উঠেছে। ইউনিয়নের মেম্বার নজরুল ইসলাম ও সায়রুল ইসলাম জানান,ভুকশিমইল ইউনিয়নের শতভাগ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। গরীব মানুষের নৌকা না থাকায় বাড়ি ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এদিকে হাকালুকি হাওর তীরে এদিকে কুলাউড়ায় ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৯টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভুকশিমইল গ্রামের কুমুদিনী বিশ^াস সাংবাদিকদের জানান,৪/৫ দিন থেকে পানি বন্দি অবস্থায় আছি। ঘরের চুলা পানিতে ডুবে গেছে। তাই রান্না বান্না করতে পারছিনা। তাই অনেকটা না খেয়ে আছি । এছাড়াও নুর উদ্দিন,পাখি মিয়া,মনসুর,এমদাদ,জামাল,বিনয় ও হেকিম জানান, তাদের বাড়িঘরে পানি উঠায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের দেখার কেউ নেই।
এব্যাপারে ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান,গত এপ্রিলের আকষ্মিক বন্যায় হাকালুকি হাওরে বন্যায় বিশেষ করে ভুকশিমইল ইউনিয়নের হাজার হাজার একর বোরো ধান পচে বিনষ্ট হয়। সে বিপদ কাটতে না কাটতে গত সপ্তাহে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে হাকালুকি হাওরে। আর এ বন্যায় হ্ওার পারের ভুকশিমইল ইউনিয়নের শত শত মানুষের বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারী ত্রান একবারেই অপ্রতুল। মানুষের চাহিদা কোনভাবে মেটানো যাচ্ছেনা।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, প্রতিদিনই আমরা বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নোট পাঠাই। উপজেলা পরিষদের পক্ষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে চাল ডাল ও ১৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ৭ ইউনিয়নে নগদ ৭০ হাজার টাকা বিতরন করা হয়েছে।