নিউইয়র্কে সৈয়দ শামসুল হকের ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’
সৈয়দ শামসুল হক চেয়েছিলেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক তোরা সব জয়ধ্বনি কর শুধু ঢাকায় নয়, নিউইয়র্কেও মঞ্চস্থ হোক। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর আগে তাঁর সেই শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন জামাল উদ্দিন হোসেনকে। নিউইয়র্কপ্রবাসী এই বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হকের সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন। গত রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই নাটক মঞ্চস্থ হলো জামাল উদ্দিন হোসেনের পরিচালনায় ও নিউইয়র্ক নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের প্রযোজনায়।
একাত্তরের ২৫ মার্চের পাকিস্তানি হামলার পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম নামের এক সাধারণ নাগরিক। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে কবি নজরুল ভেবে ধরে নিয়ে আসে। নজরুলের কাছে তাদের দাবি, পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করে বিবৃতি দিতে হবে এবং উদ্দীপনামূলক একটি কবিতা লিখতে হবে। সেই সাধারণ মানুষ নজরুল, যে কোনো দিন কবিতা লেখেননি, পাকিস্তান বাহিনীর হাতে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, জানান কবিতাও লিখবেন না। কারণ, কবি নজরুল নিজে কখনো পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করতেন না।
নাটকের শুরুতে সাদা পর্দায় দেখা গেল ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের অংশবিশেষ। নজরুলের ওপর পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের অত্যাচারের মুহূর্তগুলো এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে নাট্যাভিনয়ের সময় দর্শকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণাসূচক ধ্বনি দিয়ে ওঠেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরে অস্বীকৃতির জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নজরুলকে, কিন্তু মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে তাঁর উদ্যত হাতটি জানান দিয়ে যায়—বাঙালি পরাজয় মানবে না।
মোট ১৩ সদস্যের নাট্যদল নিয়ে যে নাটকটি উপহার দিলেন জামাল উদ্দিন হোসেন, হলভর্তি দর্শক গভীর আগ্রহের সঙ্গে তা উপভোগ করেন। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শরীফ হোসেন, মিজানুর রহমান বিপ্লব, শুক্লা রায় ও সেমন্তী ওয়াহেদ। নাটক শুরুর আগে এক আলোচনা ও সৈয়দ হকের নাটক ও কবিতা থেকে পাঠের মাধ্যমে প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।